বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় বিচার দাবিতে রাজপথে নামেন শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নেন অভিভাবক ও পেশাজীবীরাও। সবার একটাই দাবি ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই’।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বাদ জুমা নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে শুরু হয় ছাত্র-জনতার গণমিছিল। মিছিলটি সিনেমাপ্লেস, নিউমার্কেট হয়ে টাইগারপাসে গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিলে অন্তত দশ হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে মসজিদের সদর ফটকে জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের থামানোর চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে তা সম্ভব হয়নি।
এরইমধ্যে মসজিদের দক্ষিণ পাশের গেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ রাস্তায় চলে আসেন। সঙ্গে যোগ দেন মুসল্লিরাও। এসময় জেনারেল হাসপাতালের সদর ফটক থেকে আন্দরকিল্লা মোড় পর্যন্ত ছাত্র-জনতার দখলে চলে যায়।
এসময় পুলিশ সদস্যরা পিছু হটে প্রেসক্লাব ও চকবাজারগামী সড়কের মুখে অবস্থান নেন। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে সেখানেই চলে বিক্ষোভ। এসময় ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দেন একদল ছাত্রী ও অভিভাবক। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা মিছিল নিয়ে নিউমার্কেট যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মিছিল শুরু হলে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টিও। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এসময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। অনেকের হাতে ছিল দেশব্যাপী ছাত্র হত্যার বিচারের দাবি লেখা প্লেকার্ড।
বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিলটি সিনেমাপ্লেস, শহীদ মিনার হয়ে নগরের নিউমার্কেট মোড়ে পৌঁছায়। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করেন শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যরা। এসময় ছাত্রীদের আরও একটি বড় দল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের কথা রাখেনি। ছাত্রদের গ্রেফতার না করার ঘোষণা দিলেও গতকাল চট্টগ্রামের এক সমস্বয়ককে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় আমাদের ৬ সমন্বয়কের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে। আমরা তাদের কথা আর বিশ্বাস করি না।’
রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রদের ৯ দফা দাবি এখন ১৮ কোটি মানুষের। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আর ছাত্র-জনতা ঘরে ফিরবে না। সরকার যত তাড়াতাড়ি এটি বুঝবে, ততই ক্ষয়ক্ষতি কমবে। আমরা প্রতিটি হত্যার আন্তর্জাতিক তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাইছি।’
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গণমিছিলে অংশ নেওয়া সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাজিয়া সুলতানার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কারো কাছে কোনো দাবি নিয়ে আসি নাই। আমরা এসেছি হত্যাকারীদের শাস্তি চাইতে। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বন্দি দেখার আগে থামছি না।’
রিয়াজ উদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিনও এসেছিলেন মিছিলে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরাতো বেশি কিছু চায়নি, মেধা যাচাইয়ের জন্য সমান সুযোগ চেয়েছিল। তাই বলে গুলি করে প্রাণ নিতে হবে?’
পরে মিছিলটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পৌঁছালে আবারও শুরু হয় বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল যখন টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছায়, তখন বিকেল ৪টা। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন চৌরাস্তার মোড়ে সড়ক দ্বীপের ওপর উঠে জাতীয় পতাকা উড়াতে থাকেন।
তবে এই গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সড়কে পুলিশের তেমন একটা উপস্থিতি চোখে পড়েনি।