বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শেরপুরের নকলা উপজেলার গার্মেন্টস কর্মী আব্দুল আজিজ। এবার নিহত আজিজের দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করলেন শেরপুরের নকলা উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম সারোয়ার।
সোমবার (২ আগস্ট) জামায়াতে ইসলামী নকলা উপজেলার পক্ষ থেকে তিনি শহীদ আজিজের স্ত্রী হোসনা বেগমের হাতে বিয়ের কাবিন বাবদ দেনমোহরের টাকা তুলে দেন। এ সময় নকলা উপজেলার জামায়াত নেতা আতিক আলম, নারানখোলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ইমরান হোসেন সবুজসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, শহীদ আব্দুল আজিজ আমাদের জাতীয় সম্পদ ছিলেন। দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। শহীদ আব্দুল আজিজের কাছে এ জাতি অনেক ঋণী। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব সময় শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবো। আমরা বেঁচে থাকতে শহীদ পরিবার ঋণের মধ্যে থাকবে এটা খুবই কষ্টের বিষয়। দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তাই এই টাকা পরিশোধ করে শহীদকে ঋণমুক্ত করা হলো। আমাদের জায়গা থেকে সব সময় এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে আজিজ গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় টেক্সইউরোপ বিডি লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি নকলা উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের মৃত মোজাম্মেল হক মেজোর ছেলে। গত ৫ আগস্ট গাজীপুরে তার কর্মস্থলের কাছেই চলছিল ছাত্র আন্দোলন। এ সময় নিজ মোবাইল ফোন দিয়ে আন্দোলনের ভিডিও ধারণ করছিলেন তিনি। এ সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট তার গায়ে লাগে। পরে তার এক সহকর্মীর সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ২ দিন চিকিৎসার পর ৭ আগস্ট আজিজের মৃত্যু হয়। পরের দিন ৮ আগস্ট আজিজের জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
শহীদ আজিজ মারা যাওয়ার একমাস আগে পারিবারিকভাবে একই গ্রামের হোসনা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের কিছু দিন পর জীবিকার তাগিদে আজিজ কাজে ফিরে যান গাজীপুরে। বিয়ের সময় এক লাখ টাকা দেনমোহর সাব্যস্ত করে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। তার লক্ষ্য ছিল, আগস্ট মাসের বেতন ভাতা নিয়ে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করবেন। কিন্তু তার মৃত্যুতে দেনমোহর পরিশোধ হয়নি। পরে দেনমোহর পরিশোধে উদ্যোগ নেয় উপজেলা জামায়াতে ইসলামী।
এ ব্যাপারে নকলা উপজেলা জামায়াতের ইসলামীর আমীর গোলাম সারোয়ার বলেন, স্ত্রী হোসনা বেগমের দেনমোহর ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। তাই শহীদ আব্দুল আজিজের কাবিনের এ দেনমোহর পরিশোধ করে তাকে দায়মুক্ত করা হলো। কারণ আমরা এই শহীদের কাছে ঋণী।
তিনি আরও বলেন, শহীদ আজিজ ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল খুব শিগগিরই দেনমোহর পরিশোধের পর স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসবেন। মজলুম সাংগঠনিক কর্মী হিসেবে শহীদের স্বপ্নপূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। এই পরিবারের পাশে জামায়াত সব সময় থাকবে।
এর আগে নিহত আব্দুল আজিজের পরিবারকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ও জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন।





















