‘আমি খুন করার জন্য বাসায় প্রবেশ করিনি। টার্গেট ছিল স্বর্ণালংকার ও টাকা। আমাকে চিনে ফেলায় টেবিলের একপাশে থাকা ছুরি দিয়ে জবাই করেছি। পরে প্লাস্টিকের রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলি। এরপর রক্তমাখা জামাকাপড় পরিবর্তন করে তা ব্যাগে ভরে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।’
আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এভাবেই হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় পুত্রবধূর ভাইয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া সাজেদা আক্তার (৫৮) হত্যা মামলার আসামি মাদরাসাশিক্ষক তারিফুল ইসলাম (৩০)। শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হকের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে মিরসরাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ভাড়া বাসায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওইদিন সন্ধ্যা ৬টায় ওই নারীর বড় ছেলের স্ত্রীর ভাই তারিফ হোসেনকে (৩০) আটক করে পুলিশ। তিনি মিরসরাই সদর ইউনিয়নের পাত্তার পুকুর সৈয়দপুর গ্রামের সোহরাওয়ার্দী ভূঁইয়া বাড়ির দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে। হত্যার ঘটনায় নিহতের মেয়ে আছিয়া চৌধুরী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় মিরসরাই থানায় একটি মামলা (নম্বর ১৭) করেন।
নিহত সাজেদা আক্তার মিরসরাই উপজেলার ১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লাল মোহম্মদ চৌধুরী বাড়ির এম মামুন চৌধুরী প্রকাশ খান সাহেবের স্ত্রী। তারা বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলার বি-১ ফ্ল্যাটে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ভাড়ায় থাকতেন।
আসামি তারিফ হোসেন উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মৌলভী নজির আহমদ আদর্শ দাখিল মাদরাসার সুপার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি তারিফ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বন্ধু শাহদাতের মোটরসাইকেলযোগে তিনি ওই বাসায় যান। উদ্দেশ্য ছিল স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরি করা। বাসায় ঢোকার পর বোনের শাশুড়ি সাজেদা আক্তারের কাছে আলমিরার চাবি চাইলে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সাজেদা আক্তার নিচে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর টেবিলের একপাশে থাকা একটি ছুরি দিয়ে তার গলা কাটেন তারিফ হোসেন। পরে প্লাস্টিকের রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরপর আলমারি থেকে একটি নেকলেস ও নগদ ৪৩ হাজার টাকা চুরি করেন। পরে পোশাক পরিবর্তন করে রক্তমাখা জামা-কাপড় ব্যাগে ভরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান।
এরপর নিজ কর্মস্থল জোরারগঞ্জ নজির আহম্মদ দাখিল মাদরাসায় চলে যান। সেখানে ব্যাগ রেখে পুনরায় ঘটনাস্থলে সমবেদনা জানাতে আসেন। এক ঘণ্টার মধ্যে পুরো কিলিং মিশন শেষ করেন তিনি।
নিহতের মেয়ে ও মামলার বাদী আছিয়া চৌধুরী বলেন, ‘তারিফকে আমরা নিজের ভাইয়ের মতো জানতাম। আমার বাবার বাড়িতে নতুন ঘর নির্মাণ ও প্রবাস থেকে আসা আমার ছোট ভাই আমজাদের বিয়ের জন্য তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ সে নির্মমভাবে আমার মাকে হত্যা করে।’
কান্না করতে করতে তিনি বলেন, ‘লাগলে ২০ লাখ টাকা চাইতি, আমরা দিতাম। কিন্তু এভাবে আমার মাকে খুন করলি কেন? আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরসরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের জানান, আসামি তারিফুল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।