মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৮ মাঘ, ১৪৩১

নারীর আত্মরক্ষায় মার্শাল আর্ট

কিভাবে বেঁচে আছি আমরা! লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা, কীটের মত বেঁচে থাকার লজ্জা। এই সমাজে ৪ মাসের শিশু বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের হাত থেকে রেহায় পাচ্ছে না। প্রতিদিন যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণ, নিপীড়ন। এর থেকে কি কোনও প্রতিকার নেই? সমাজের প্রতিটি স্তরেই নারীর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ, খুনসহ নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়ে চলছে। এসকল ঘটনা বিচারহীনতার ফলে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলছে।

আমাদের দেশে একমাত্র ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রেই অপরাধী নয় বরং ভিকটিমকেই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। নারীরাও নিজেকে দায়ী করেন। সমাজ থেকেও এসকল ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করা হয়। ধর্ষণের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবার সামাজিকতার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বাধ্য হয়। এই সমাজ শুধু ধর্ষণের শিকার নারীর দিকে আঙুল তোলে তা-ই নয়, ওই নারীকেই প্রমাণ করতে হয়, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ফলে সামাজিকভাবে প্রতিটি নারী নিরাপত্তাহীন।

পহেলা বৈশাখে যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোর কোনো বিচার হয়নি, প্রমাণ থাকার সত্ত্বেও। ধর্ষণ প্রতিরোধে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি, তা থেকে বের হতে হবে। ধর্ষককে দৃষ্টান্তমূলক সাজার আওতায় আনতে হবে। দেখা যায় যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ হওয়ার পরেও প্রায় ৫৮ শতাংশ নারী আইনি সহায়তা নিতে আসেন না কারণ বিচার ব্যবস্থার প্রতি তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। এক সময় দেশে প্রচুর পরিমাণে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটতো। কিন্তু এখন এর পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। কারণ কার্যকর আইনি ব্যবস্থা ও নীতিমালা আছে এবং তার প্রয়োগ ছিল। নারী নির্যাতন, ধর্ষণের জন্য আইন কার্যকর করতে হবে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নারী নিপীড়নের শিকার হচ্ছে না। বাসা, স্কুল-কলেজ, যানবাহন সর্বক্ষেত্রে বিষবৃক্ষের মত ছড়িয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণায় দেখা যায় রাজধানী ৯৪ শতাংশ নারী গণপরিবহনে নির্যাতনের শিকার হয়। কখনো ইভটিজিং, যৌন নিপীড়ন কখনও জীবনহানি ঘটে। পথে ঘাটে এমনকি ঘরেও নারীর নিরাপত্তা নেই। একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি যেখানে সরকার, শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিতে পারছে না। দেশে যে আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ যৎসামান্যই হয়। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে খুন ধর্ষণের মত ঘটনাগুলো বাড়তেই থাকবে।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্টের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। তাছাড়া রাজনীতির ছত্রছায়ায় এ ধরনের অপরাধ সংগঠিত হওয়ার ঘটনা দেশে কম নয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের অপরাধ করে অপরাধী পার পেয়ে যায় আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সরকারকে দ্রুত এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আইনি যথাযথ প্রয়োগ করার মাধ্যমে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দিন দিন বেড়ে চলা যৌন নির্যাতনের প্রতিরোধ গড়ে তোলার অন্যতম উপায় হতে পারে আত্মরক্ষার কৌশল।

এক্ষেত্রে মার্শাল আর্ট হতে পারে প্রতিবাদের ভাষা। ‘কারাতে’ শব্দের অর্থ হলো ‘খালি হাতে’। অর্থাৎ শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে খালি হাতে আত্মরক্ষার কৌশলই হলো কারাতে। কারাতে মানে আক্রমণ করা নয়, বরং নিজেকে বাঁচানো। মার্শাল আর্ট কাউকে মারমুখী করে তোলে না বরং তা নিজের সম্মান, মর্যাদাবোধ বা অধিকার নিয়ে বাঁচার জন্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। কৌশল জানা থাকলে নারীরা নিজেকে রক্ষা করতে পারে সহজে। দেশে আনেক নারী নিজেকে রক্ষা করার জন্য কারাতে, তায়কোয়ানদো প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। একজন নারী আত্মরক্ষার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেন। সাধারণ মেয়েরা যখন বখাটেদের অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করছে তখন মার্শাল আর্ট শেখা মেয়েরা তার জবাব দিচ্ছে বা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশলের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের আত্মবিশ্বাস শারীরিক ও মানসিক শক্তি। আত্মরক্ষার জন্য ব্রুসলি হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে নারীকে। সকল নারীর এবং অভিভাবকের উচিত তাদের সন্তানদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেয়া। এই প্রশিক্ষণ থাকলে যেকোনও বিপদে একজন মানুষ নিজের আত্মরক্ষা করতে পারে। তাছাড়া সে আত্মবিশ্বাসীও হয়ে উঠবে। দেশে অনেক সংগঠন উদ্যোগী হয়ে মেয়েদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। নারীরা মার্শাল আর্টের মাধ্যমে আরও সাহসী আত্মপ্রত্যয়ী হবে। সকল কাজে মর্যাদার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে।

বর্তমান সময়ে মার্শাল আর্ট বা আত্মরক্ষা শেখা সকল নারীদের জন্য প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীর নিরাপত্তা দিতে নারীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। মেয়েদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারাতে যেমন আমার মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য জরুরি, তেমনি তাদের আত্মবিশ্বাসী হতেও সহযোগিতা করেছে।’ মার্শাল আর্ট এটি একটি আর্ট। যা চর্চা করলে শরীর ঠিক থাকে। আমাদের যেখানে প্রতিদিন ব্যায়াম করার প্রয়োজন, সেখানে আমরা কারাতে শিখলেও পারি। কারাতে চর্চা করলে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। মন ভালো থাকে। শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়। অতিরিক্ত মেদ থাকলে কেটে যায়। হতাশা বা নেতিবাচক অনুভূতিও তৈরি হয় না। ফলে মাদক থেকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে কারাতে।

লাইফস্টাইল মডেল: প্রিয়াঙ্কা জামান

Join Manab Kallyan