হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হতো হেপাবিগ ভ্যাকসিন। দেশের বাজারে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা দামের কোরিয়ান এই ভ্যাকসিন কেরানীগঞ্জে তৈরি করতো একটি চক্র। গর্ভবতী নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধটি মাত্র ১০ টাকার টিটেনাস দিয়ে নকল সিল বসিয়ে বাজারে বিক্রি করতো চক্রটি।
শুধু হেপাবিগ নয় এই চক্রের হাতে তৈরি হতো ভিটামিন ডি৩ অ্যাম্পুল ইনজেকশন, রেসোগাম পি, ক্লোপিকজল ডিপোর্ট, ফ্লুয়ানজল ডিপোর্ট, হেপাবিগ হেপাটাইটিস বি-সহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি নকল অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরি করতো তারা। আর এসব ওষুধ ব্যবহারে সাধারণ মানুষের জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি রাজধানীর কোতোয়ালি ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে নকল ভ্যাকসিন ও ওষুধ তৈরি চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রোববার (৭ এপ্রিল) ঢাকার এক বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় কয়েক লাখ নকল ওষুধ। যার আনুমানিক বাজারমূল্য এক কোটি টাকারও বেশি।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. আনোয়ার হোসেন (৪৪), অসিম ঘোষ (৪৬), মো. মশিউর রহমান ওরফে মিঠু (৩৮) ও নূরনবী (৩৫)।
সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ডিবি পুলিশের অভিযানে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধসহ একটি বড় চক্রকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের কাছে খবর আসে তাদেরই সহযোগীরা মিটফোর্ড থেকে ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহ করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ইনজেকশন তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল।
চক্রটি টিটেনাস দিয়ে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন বানাতো, ভিটামিন বি৩ বানাচ্ছিল এক্টুপিস সকেট দিয়ে এবং ক্লোপিকজল বানাচ্ছে ইন্ডিয়ান ড্রাইকিজাম অ্যাম্পুল দিয়ে। তার মানে এই ওষুধগুলো নকল বানিয়ে অধিক লাভে বিক্রি করছে। মানে টিটেনাস ১০ টাকা দিয়ে কিনে হেপাবিগ বানিয়ে চার হাজার ৬০০ টাকায়, ক্লোপিকজল পাঁচ টাকা দিয়ে বানিয়ে ডেনমার্কের ওষুধ বলে বিক্রি করছে ৪৫০ টাকা। গর্ভবতী নারীদের প্রয়োগ করা হয় রোসোগাম পি। এটা জেসন গ্রুপের একট্রোপিন ১০ টাকা দিয়ে কিনে রোসোগাম বানিয়ে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করতো। এভাবে বিভিন্ন ওষুধ নকল করে বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল তারা।
ডিবিপ্রধান বলেন, এসব নকল ওষুধের কার্যকারিতা না থাকায় সাধারণ মানুষ কোনো সেবা পেতো না। বরং নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতো। তারা এমনভাবে এসব ওষুধ হুবহু প্যাকেজ করতো যাতে সাধারণ মানুষ চিনতে না পারে। কোনটা আসল আর কোনটা নকল।
যেসব ওষুধ নকল তৈরি করতো তারা- হেপাবিগ, ভিটামিন ডি৩ অ্যাম্পুল ইনজেকশন, রোসোগামা পি, ফুয়ানজল ডিপোর্ট, ক্লুপিক্সল ডিপোর্ট, হেপাবিগ হেপাটাইটিস বি এবং ডিপথেরিয়া ভেকসিন। আর এসব ওষুধ রাজধানীর মিডফোর্ট মেডিকেলের পাশের ওষুধের বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে আসছিল।