ঈদুল ফিতরের মতো এবার ঈদুল আজহাতেও টানা ৫ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ে দেশ। টানা এই ছুটি সরকারি চাকুরেদের পরিবারে ঈদ আনন্দের মাত্রা বাড়ায়। সপ্তাহের মাঝামাঝি দিনে কোরবানি পড়ায় ছুটি শুরু হয় শুক্রবার (১৪ জুন) থেকেই। এমন ছুটিতে পরিজন নিয়ে আনন্দ ভ্রমণের পরিকল্পনা করবেন অনেকে, এমনটিই ভাবনা ছিল পর্যটন সেবীদের।
এমনটি হলে পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার আশায় পর্যটক বরণ ও সেবার প্রস্তুতি নেন সংশ্লিষ্টরা। কোরবানির পর মাঝখানে দুইদিন খোলা থাকার পর আবার সপ্তাহিক ছুটি। সে হিসাবে বেড়ানোর তালিকা দীর্ঘই বলা যায়। আবার এরপরের বৃহস্পতি-শুক্র ও শনিবারও পর্যটক এবং দর্শনার্থী সমাগম বাড়তে পারে বলে ধারণা ছিল পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। তবে উল্লেখ করার মতো আগাম বুকিং হয়নি বলে জানিয়েছেন পর্যটনের আবাসন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের কক্সবাজার প্রধান ইমতিয়াজ সোমেল বলেন, যান্ত্রিকতায় থাকা মানুষগুলো সুযোগ পেলেই ভ্রমণের ছক আঁকেন। আবহাওয়া বৈরী হলেও কোরবানির ঈদেও টানা ছুটির সুযোগ আসায় ৮০-৯০ শতাংশ বুকিং হবে আশা ছিল। কিন্তু আমরা মাত্র তিনদিনের জন্য গড়ে ৭০ শতাংশ রুম আগাম বুকিং পেয়েছিলাম। ঈদে ১১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই রাতের প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছি। এ প্যাকেজে আসারা একটি ডিনার বা লাঞ্চও কমপ্লিমেন্টারি পাবেন।
হোটেল রামাদাহর ফ্রন্ট অফিস সুপারভাইজার তপু সিং জানান, ঈদ উপলক্ষে হোটেলে ৬৫-৭০ শতাংশ অগ্রীম বুকিং হয়। বেশ কয়েকটি প্যাকেজে আকর্ষণীয় ছাড়ের ঘোষণা রয়েছে।
হোটেল সায়মন বীচ রিসোর্টের ফ্রন্ট অফিস কর্মকর্তা সারোয়ার আলম বলেন, আমাদের বুকিং সন্তোষজনক। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। রয়েছে বুফে লাঞ্চ ও ডিনারের ব্যবস্থাও।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিমের মতে, আকাশে মেঘ-রুদ্দুর লুকোচুরি থাকলে সৈকতের চিত্র মোহনীয় হয়ে ওঠে। এ কারণে কোরবানির ছুটিতে পর্যটকে ভরতে পারে বেলাভূমি। তবে ঈদের পর দুদিন চলে গেলেও সেভাবে পর্যটক সমাগম হয়নি। কিন্তু দর্শনার্থী বেড়েছে। ঈদে সামগ্রীকভাবে ৩০-৪০ শতাংশ হোটেল-মোটেল কক্ষ বুকিং হয়। এ পরিস্থিতিতে হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে হতাশ।
পর্যটক যা-ই আসুক সব পর্যটন স্পটগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটক যা-ই আসুক ছুটির দিনগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকে আমাদের। এবার চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ছুটি এবং বিশেষ দিনেও নিরবচ্ছিন্ন থাকবে নিরাপত্তা। পাশাপাশি সম্ভাব্য বিপদাপন্নদের উদ্ধারকারি লাইফগার্ডরাও সন্তর্পণে দায়িত্ব পালন করছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ স্বচেষ্ট রয়েছে টেকনাফ, ইনানী, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল ব্রিজ এলাকায়।
হোটেল ও গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সৈকত শহরে চার শতাধিক হোটেল-মোটেলে দৈনিক প্রায় সোয়া লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু হোটেল আগাম বুকিংয়ে মনে হয়েছিল আবহাওয়া যা-ই থাক পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হবে, তবে পর্যটক উপস্থিতি নিয়ে চরম হতাশ।
হোটেল সী-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী জানান, অতীতে প্রতি ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বাড়ার ইতিহাস মন্দ নয়। কিন্তু এবার তার দৃশ্য পুরো ভিন্ন।
আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সপ্তাহ খানেক ভালো ব্যবসা হয়েছিল। এর ক’দিন পর থেকে পর্যটক খরা চলছে। এ অবস্থায় বড় লোকসানে পড়েছে সবাই। কোরবানির ঈদে পর্যটক এলে আগের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন ছিল। সে আশায় গুড়ে-বালি।
ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটকরা আমাদের লক্ষ্মী। তাদের সেবা দিতেই মুখিয়ে থাকি আমরা। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে হোটেল-মোটেল দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সেভাবে পর্যটকদের জন্য বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বিদেশের মতো সামগ্রীক বিনোদন সুবিধা বাড়ানো গেলে সারাবছরই ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন বাড়বে।
জেলা সদরের বাইরে হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার প্রায় পর্যটনস্পট গুলোতেও দর্শণার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, বিশ্ব পর্যটনের সম্ভাবনাময় স্থান কক্সবাজারকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনেক। আমরা তা বাস্তবায়ন করে পর্যটন বিকাশে বদ্ধপরিকর। ছুটির দিনে পর্যটকদের নিরাপত্তায় মাঠে থাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম।