শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১

পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি তুলে আয় করা সম্ভব

মানুষ চায় জীবনের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তের স্মৃতি সারাজীবন সংরক্ষণ করতে। সেই আদিম যুগের মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগের আধুনিক মানুষ সবার মধ্যেই এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আদিম মানুষ গাছ, লতা-পাতা এবং পাহাড়ের গুহায় বিশেষ চিহ্ন বা ছবি একে বিভিন্ন স্মৃতি সংরক্ষণ করতো। বর্তমানে মানুষের বিশেষ মুহূর্ত আজীবন ধরে রাখার জন্য ছবির কোনো তুলনা হয় না।

একটি ছবি একজন দর্শকের মগজে একটি গল্প তৈরি করে দেয়। একটা সময়ের গল্প, একটা মুহূর্তের গল্প, কখনো একটা জীবনের গল্প। আর ক্যামেরার কৌশলে যারা এ সৃজনশীল শৈল্পিক কাজটি করে থাকেন, তাদের বলা হয় ফটোগ্রাফার অর্থাৎ আলোকচিত্রী। এজন্য বর্তমানে ফটোগ্রাফির চাহিদা আকাশচুম্বী।

পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করেও সুনাম কুড়ানো এবং মাসে ভালো টাকা আয় করা যায়। এমনই একজন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম আল শামস। ফাহিমের ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আগ্রহ জাগে কৈশোরেই। যখন তিনি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী; তখন তার মা তাকে একটি ক্যামেরা কিনে দেন।

প্রথম প্রথম ক্যামেরা পেয়ে খুব খুশি, ভালো লাগা আর আগ্রহ নিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে যেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমবাগানে। ঘাস, লতা, পাতা, পোকামাকড়, ঘাসফড়িং যা পেতেন; তারই ছবি তুলতেন। তখন এটাও ধারণা ছিল না যে, ক্যামেরা দিয়ে মানুষের ছবিও তোলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন বরণে প্রথম ছবি তুলে শুরু হয় মানুষের ছবি তোলার হাতেখড়ি। সেই ছবিতেই বাজিমাত। বন্ধুরা ছবি দেখে হতভম্ব। সবাই বলেন, ‘তোর ছবি তোলার হাত খুবই ভালো। ছবির ফ্রেমও খুব ভালো বুঝিস তুই।’ ফলে ছবি তোলার পাশাপাশি ফটো এডিটিং শিখতে থাকেন নিজ উদ্যোগে।

এরপরের যাত্রা দিনাজপুরে কাজিনের বিয়েতে। বর-কনের দারুণ সব ছবি তুলে বানিয়ে ফেলেন ফটো অ্যালবাম। তা দিয়ে খুলে ফেলেন ফেসবুক পেজ। পেজে আপলোড দেওয়ার পর প্রথম অ্যালবাম হিসেবে ভালোই সাড়া পায়। পরে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি থেকে পোট্রেট ফটোগ্রাফির দিকে বেশি নজর দেন ফাহিম। যাতে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। ফেসবুক পেজে যখন তিন নাম্বার অ্যালবাম আপলোড করেন; তখন একটা পেইড কাজের অফার পান। এটাই তার প্রথম ক্লায়েন্ট এবং কাজ। ঢাকার ধানমন্ডি লেকের সুন্দর সব দৃশ্যপটে এই প্রথম ক্লায়েন্টের ছবি তোলেন তিনি। অনুমতি নিয়ে এগুলো ফেসবুক পেজে আপলোড করেন। এরপর চেষ্টা করেন সেলিব্রেটি বা ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ করতে।

এরপর বিপত্তি বাঁধে ক্যামেরা নিয়ে। তার কাছে যে ক্যামেরাটি ছিল; সেটি অত্যাধুনিক মানের না হওয়ায় তা দিয়ে বড় কোনো প্ল্যাটফর্মে ছবি তোলা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। এর জন্য অত্যাধুনিক মানের ক্যামেরা দরকার। কিন্তু টাকা কোথায়? মায়ের কাছে টাকা চান। মা টাকা দিতে অসম্মতি জানান। ফাহিম হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। মাকে চ্যালেঞ্জ করেন, ঋণ করে হলেও যেন টাকা দেন। এ ঋণ তিনি অবশ্যই ১ বছরের মধ্যে পরিশোধ করবেন। তার কথামতো ঋণ করে একটি অত্যাধুনিক ক্যামেরা কিনে দেন। পরে পুরোদমে ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। সাত মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করে দিতে সক্ষম হন। এটিই তার জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা।

বর্তমানে ফাহিম বিপণনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পণ্যের ছবি তুলে দেন। এর সঙ্গে প্রোট্রেট ফটোগ্রাফি করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এখান থেকে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকার মতো উপার্জন করেন। ফটোগ্রাফির সঙ্গে সঙ্গে সিনেমাটোগ্রাফি করছেন। প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিংও শিখছেন। ভবিষ্যতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জবের বদলে ফটোগ্রাফি করতে চান তিনি।

সম্প্রতি ফাহিম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চরকির একটি ওয়েবফিল্ম ‘শুক্লপক্ষ’তে স্ট্যান্ডআপ ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন। এ ওয়েবফিল্মে কাজ করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল, খায়রুল বাশারের মতো অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা। পরিচালনা করেছেন ভিকি জাহেদ।

Join Manab Kallyan