মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

শরৎ এর কাশফুল

কাশফুল একধরনের বহুবর্ষজীবী ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ।এর বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum । এরা উচ্চতায় সাধারনত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।নদীর তীরে ফুলফোটা শ্বেতশুভ্র কাশবন দেখতে খুবই সুন্দর। এর আদিবাস রোমানিয়া। কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়। এর কারণ হল নদীর তীরে পলিমাটির আস্তর থাকে এবং এই মাটিতে কাশের মূল সহজে সম্প্রসারিত হতে পারে।

শরত ঋতুতে সাদা ধবধবে কাশফুল ফোঁটে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। কাশফুল পালকের মতো নরম এবং রঙ ধবদবে সাদা। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ খুবই ধারালো। এটি নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে মাটিতে দ্রুত উপনিবেশ স্থাপন করতে পারে। এর ফলে কোথাও কোথাও ফসলি জমি এবং চারণভূমিগুলিকেও এরা গ্রাস করে আক্রমণাত্মক প্রজাতিতে পরিণত হয়। এই ধরনের সমস্যা পানাম প্রজাতন্ত্রে নথিভুক্ত করা হয়েছে। গ্রাম এলাকার জ্বালানি ও কম দামে পানের বরজের ছাউনি হিসেবে কাশের ব্যবহার হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে, কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। যেমন- পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়।

এছাড়াও শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়। শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহৃত হয়। কুশ হল কাশফুলের সমগোত্রীয় উদ্ভিদ যা কিনা কাশের মতই দেখতে; হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘পুরাণ’-এ কুশের স্থান শীর্ষে। সাহিত্যে কাশফুলের কথা এসেছে নানাভাবে।সাহিত্যিকগণ তাদের বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে কাশফুলের সৌন্দর্যরূপ বর্ণনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন গ্রন্থ ‘কুশজাতক’ কাহিনী অবলম্বন করে ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন। কাশফুল মনের কালিমা দূর করে। শুভ্রতা অর্থে ভয় দূর করে শান্তির বার্তা বয়ে আনে।

শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়। প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কাশফুল ছিল। কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কুশ। এরা দেখতে প্রায় কাশফুলের মতোই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘পুরাণ’-এ কুশের স্থান খুব উঁচুতে। গ্রামের বাড়ি বা পুকুর পাড়ে ইচ্ছা করলে কাশফুল লাগান যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে কিছুটা ঠাণ্ডা ও বালু মিশ্রিত স্থান বেছে নিতে হবে। কাশবন কমে যাওয়ার পেছনে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব দাবী পরিবেশ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কোনো কিছুর পরিবর্তন প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনই নির্দেশ করে। তাছাড়া নদীর তীর দখল হয়ে যাবার জন্যেও কাশফুল দিনদিন কমে এসেছে। জ্বালানি বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য নয়, অন্তত মানুষের সৌন্দর্য প্রেমিদের মনের চাহিদার জন্য হলেও নদী তীরে থাকুক আগের মত দিগন্ত-বিস্তৃত কাশবন।

জমি দখল আর নদের তীরে চাষাবাদ বেড়ে যাওয়ায় কাশবনের পরিধি কমে এসেছে।নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনানদীর তীরে ভাটিবন্দর এলাকায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় কাশফুল বন।এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে কাশফুলের বন দেখতে পাওয়া যায়।শরৎকালের সৌন্দর্যরূপ মানুষকে আন্দোলিত করে নানাভাবে তারমধ্যে কাশফুল অন্যতম।

 

লেখা ও সম্পাদনায়: আমিনুল ইসলাম

শিক্ষক, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ।

তথ্যসূত্রঃ ইউকিপিডিয়া।

Join Manab Kallyan